শেখ মামুনুর রশীদ মামুনঃ
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার তারাটি ইউনিয়নের ভূমি অফিস যেন ছিল এক ব্যক্তির রাজত্ব—নায়েব হুমায়ূন। ঘুষ, দালাল সিন্ডিকেট, দায়িত্বে চরম অবহেলা, অফিসে অনুপস্থিতি—এসব ছিল তার নিত্যদিনের কর্মপদ্ধতি। অথচ এসব গুরুতর অভিযোগের পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর পদক্ষেপ না নিয়ে তাকে কেবল বদলি করে পাঠানো হয়েছে গফরগাঁও উপজেলার টাংগাব ইউনিয়নে। যেন তার সব অপকর্মের ধোয়া উঠেছে বদলির ধোঁয়ায়!
ঘুষ না দিলে কাজ হয় না—এই ছিল ভূমি অফিসের নিয়ম!
তারাটি ইউনিয়নের ভুক্তভোগীরা একবাক্যে বলছেন, “নায়েব হুমায়ূন ছাড়া অফিসে কিছুই চলত না। তার পকেটে ঘুষ না ঢুকলে নামজারি, খতিয়ান সংশোধন, খাস জমির বরাদ্দ—সব কাজ আটকে যেত।” এমনকি অনেকে জানান, দিনের পর দিন ঘুরিয়েও কাজ না করে অবশেষে দালালের কাছে যেতে বাধ্য করা হতো। তিনি অফিসে থাকতেন না, ফোনেও ধরা যেত না।
দালাল সিন্ডিকেটে বাঁধা সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকারঃ
জানা গেছে, হুমায়ূন নিজেই গড়ে তুলেছেন একটি শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট। সরকারি সেবা নেয়ার জন্য যেখানে মানুষের অধিকার থাকার কথা, সেখানে গরিব-মেহনতি মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অবৈধ খরচের বোঝা। খাস জমির বরাদ্দ থেকেও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এক ইউনিয়ন নয়—অভিযোগ ছড়িয়েছে একাধিক জায়গায়ঃ
চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নে দায়িত্বকালীন সময়েও হুমায়ূনের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ ছিল। স্থানীয় কর্মচারীরা জানান, “টাকা দিলে সে অসম্ভবকে সম্ভব করত, আর টাকা না দিলে কাজই হতো না।” অর্থাৎ, হুমায়ূনের কাছে সরকারি পদটি ছিল ক্ষমতার নয়, দুর্নীতির উৎস হিসেবে ব্যবহারের একটি হাতিয়ার।
বদলি নয়, বিচার চাই!
প্রশাসনের উদাসীনতা এবং ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় থেকে হুমায়ূন গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, তিনি ময়মনসিংহ শহরের নতুন বাজার এলাকায় দুর্নীতির টাকায় কেনা একটি আলিশান ফ্ল্যাটে থাকেন। সেখানেই তার মূল সময় কাটে। ফলে টাংগাব ইউনিয়নের ভূমি অফিসেও চলছে আগের মতই ঘুষ-দুর্নীতি আর দায়িত্বে অবহেলা।
একজন সরকারি কর্মকর্তা দিনের পর দিন সাধারণ মানুষকে হয়রানি করবেন, দুর্নীতির জাল বিছিয়ে কোটি টাকার মালিক হবেন—তবু তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা তো দূরের কথা, একটি সাসপেনশনও জুটবে না? বদলি করে কি সব অপকর্ম ধুয়ে-মুছে ফেলা যায়?“কুকুরের লেজ সোজা হয় না”—ক্ষুব্ধ টাংগাববাসীঃ
বর্তমানে গফরগাও এর টাংগাব ইউনিয়নেও হুমায়ূনের অপকর্মের খবর মিলছে। সেখানকার অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, “আমরা একজন দায়িত্বশীল মানুষ চেয়েছিলাম, দুর্নীতিবাজ না। কিন্তু প্রশাসন আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয় না, তেমনই তার স্বভাবও পাল্টায়নি।”
অবিলম্বে বিভাগীয় তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিঃ তারাটি, ঈশ্বরদিয়া ও টাংগাবের ভুক্তভোগীরা এখন একক কণ্ঠে বলছেন—এই দুর্নীতিবাজ নায়েব হুমায়ূনের শুধু বদলি নয়, চাই কঠোর তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। নয়তো তারা জানান, এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটতে বাধ্য হবেন।
প্রশ্ন হচ্ছে—সরকারি চাকরি কি দুর্নীতির লাইসেন্স? বদলি কি বিচার? এখনই সময় ব্যবস্থা নেওয়ার। প্রশাসনের উচিত মানুষের ক্ষোভ, দুর্ভোগ ও প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।