বিশেষ প্রতিনিধিঃ
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার ককৈরগড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তার হোসেনের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তার বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠে আসছে, যার ফলে স্থানীয় জনগণ গভীরভাবে ক্ষুব্ধ। অভিযোগ রয়েছে, তিনি জোরপূর্বক মানুষের জমি দখল, বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ এবং ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে এলাকার মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছেন।
এলাকার সূত্রে জানা যায়, মুক্তার হোসেন তার রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০২৪ সালে কবরস্থানে মাটি ভরাটের জন্য ৫২ হাজার টাকার প্রকল্পের বরাদ্দ তিনি আত্মসাৎ করেছেন। তাছাড়া, কৈলাটি আজিজুলের বাড়ির পাশে মাটি ভরাট, চকপাড়া ইমরানের বাড়ি থেকে পাকা রাস্তা পর্যন্ত রাস্তা মেরামত, কুলুন্জা থেকে গন্ডাবেড় ভায়া ডেউটুকুন বাজার পর্যন্ত বেরীবাধ প্রকল্প এবং গন্ডাবেড় মাদ্রাসা-মসজিদের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি কর্মসৃজন প্রকল্পসহ আরও বহু প্রকল্পের টাকা নিজের পকেটে ভরেছেন।
মুক্তার হোসেন শুধু প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তিনি এলাকার নিরহ জনগণের জমিও জোরপূর্বক দখল করেছেন। নিজের বাড়ি নির্মাণ করতে তিনি স্থানীয় সাবেদ আলীর ছেলে কাসেম আলীর জমি দখল করেছেন। গন্ডাবেড় গ্রামের আবুল কাশেম ঢালীর জমি, যার খতিয়ান নং ৪০, জে এল নং ৭৪, দাগ নং ৩৪৮, ৩৫৩, ৩৬১ সহ মোট ৪০ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছেন। এছাড়াও, তিনি আবুল কাশেম ডালিকে রাইস মিলের কথা বলে ২ শতাংশ জমি লিখে নিয়েছেন। এমনকি, একই গ্রামের আবদুল মান্নানের ৪ কাটা ২ শতাংশ কৃষি জমি প্রতারণার মাধ্যমে নিজের নামে লিখে নিয়েছেন।
এছাড়া, মুক্তার হোসেন সরকারি প্রকল্পের টিউবওয়েল আব্দুল মান্নানের নামে বরাদ্দ হলেও তা বিক্রি করে দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারি সেবা কার্ডের জন্য ঘুষ আদায় করে, ঘুষ না দিলে ভুক্তভোগীদের নানা ধরনের অত্যাচারের শিকার করতে বাধ্য করেন। গন্ডাবেড় গ্রামের গিয়াস উদ্দিন বিশ্বাসের সাথে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড পেতে ঘুষ না দেওয়ায় তাকে মুক্তার হোসেন মারধর করেছেন।
তিতারজান গ্রামের শহিদ মিয়া অভিযোগ করেছেন, মুক্তার হোসেন সেবাদানকারী কার্ডের জন্য ঘুষ আদায় করেন এবং ঘুষ না দিলে ভুক্তভোগীদের নানা সমস্যায় ফেলেন। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অসহায় মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসান এবং তাদের বিরুদ্ধে জুলুম চালান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মুক্তার হোসেনের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে সাহস পাননি। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে মামলা ও হামলার ভয় দেখানো হতো। দীর্ঘদিন ধরে তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারেনি, কারণ তিনি দলের সভাপতি পদে থাকার সুবাদে আইনের তোয়াক্কা করেন না। তবে, বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী অনেকটা মুখ খুলতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে, একই গ্রামের নাঈম মিয়া থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন, এবং বাকি ভুক্তভোগীরা অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্থানীয় ছাত্রজনতা এবং বিএনপির নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এতসব অপকর্ম করেও কিভাবে একজন আওয়ামী লীগ নেতা এখনো প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে! তাদের প্রশ্ন, কেন এখনো তাকে গ্রেপ্তার করা হলো না? এই রহস্য ঘিরে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, মুক্তার হোসেন এবং তার স্ত্রী ইউপি সদস্য রানু আক্তারকে দ্রুত গ্রেফতার করা উচিত। তাদের মতে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তারা দাবি করছেন, মুক্তার হোসেন এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, তা নাহলে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সচেতন মহল ও এলাকাবাসী দাবি জানিয়েছেন, যাতে তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ শান্তি ফিরে পায় এবং আইন সম্মতভাবে ন্যায় বিচার পাওয়া যায়।