স্টাফ রিপোর্টার: জয়নালের পেশা দিনমজুরি, নেশা বই পড়া, গড়েছেন সাড়ে তিন হাজার বইয়ের লাইব্রেরি। বই পড়তে পড়তেই গ্রামে গড়ে তুলেছেন পাঠাগার। পাঠাগারের নাম দিয়েছেন ‘সাতভিটা গ্রন্থনীড়।
পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন জয়নাল আবেদীন। পূর্বপুরুষদের মতোই একসময় দিনমজুরি শুরু করেন। তবু আর ১০ জন সাধারণ দিনমজুরের সঙ্গে কোথায় যেন ব্যতিক্রম জয়নালের।
২০১১ সালের এক দিন। ইটভাটায় কাজ শেষে ঘোরাঘুরি করছিলেন। ফুটপাতে বইয়ের দোকান দেখে থামেন। বইগুলোর নাম জয়নালের ভালো লাগে। দামও কম। দুটি বই কেনেন তিনি। অবসরে বই দুটি পড়েন। ছোটবেলায় স্কুলের বই পড়তে নীরস লাগত আর এই বইগুলো পড়তে আনন্দ লাগছে। তারপর আবার তিনি বই কেনেন। এভাবে দিন দিন বইয়ের নেশা পেয়ে বসে তাঁকে।
এরপর কাজের সন্ধানে যখনই গাজীপুর গেছেন, বই কেনার চেষ্টা করেছেন। গাজীপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন, টঙ্গী কলেজ গেট থেকে পুরোনো বই কিনতেন। এভাবে বাড়তে থাকে বইয়ের সংগ্রহ। ভাবতেন, গ্রামে গিয়ে একটা পাঠাগার দেবেন।
যথারীতি কাজ শেষে কয়েক মাস পর গ্রামে ফিরে এলেন জয়নাল। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললেন। জয়নালের প্রস্তাবে সবাই রাজি। গ্রামে একটি পরিত্যক্ত জায়গায় ঘর তোলার সিদ্ধান্ত হলো। পাঠাগারের নাম দেন সাতভিটা গণপাঠাগার। ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর পাঠাগারের উদ্বোধন হয়।
২০১৩ সাল। পাঠাগারের বইয়ের সংখ্যা তখন ২০০। ভালোই চলছিল সব। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রামে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে সাতভিটা। একসময় পাঠাগারটিও বন্ধ হয়ে যায়। য়নাল চলে আসেন গাজীপুরে। তবে তাঁর মন পড়ে থাকত বইয়ের পাতায়। পাঠাগার গড়ার চিন্তায়। কয়েক মাস পর গ্রামে ফেরেন জয়নাল। আবার শুরু করেন বই সংগ্রহ। এবার তাঁর থাকার ঘরের একটি অংশে বই জমান। বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দেন। নিজেই আবার সময় করে সংগ্রহ করে আনেন।
২০১৫ সাল। জয়নাল তাঁর এক প্রতিবেশীর কাছে পাঠাগারের জন্য ১ শতাংশ জমি চান। তিনি জমির দাম ধরেন ২০ হাজার টাকা। ঠিক হয়, প্রতি মাসে এক হাজার করে টাকা দিয়ে জমির মূল্য শোধ করবেন জয়নাল। প্রতিবেশী তাতেই রাজি।
জমি কিনে পাঠাগার গড়ার খবর গ্রামে চাউর হয়। জয়নালের কাজকে কেউ বলতে থাকে পাগলামি, কেউ বলে গরিবের ঘোড়ারোগ আরো নানান কথা।
২০১৯ সালে জেদের জোরেই এক শতাংশ জমির দাম শোধ করেন। এরপর বন্ধু ও পাঠকেরা মিলে জমিতে মাটি ভরাট করেন। একটি টিনের চালা তোলেন। চেয়ার, টেবিল ও বুকশেলফ বানিয়ে ফেলেন। কেটে যায় দুই বছর। ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয় জয়নালের পাঠাগার—সাতভিটা গ্রন্থনীড়।