জিডি করবেন নাকি এজাহার করবেন।

কখন জিডি ও কখন এজহার করবেন? কেউ কোনো কারণে কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হলে কিংবা কোনো অপরাধের শিকার হলে প্রথমেই ভাবেন যে কাছের থানায় গিয়ে প্রতিকার চাইবেন। কিন্তু থানায় গিয়ে আসল প্রতিকার কীভাবে চাইবেন, তা নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে থাকেন। বিশেষ করে থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) নাকি এজাহার করবেন, তা নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। অনেক সময় বড় কোনো অপরাধ ঘটলেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। পুলিশের কাছে ঠিকঠাক উপস্থাপন করতে পারেন না। ফলে অনেকেই আইনের সঠিক প্রতিকার নেওয়া থেকে বঞ্চিত হন।

জিডি কখন করবেন?

কারও দ্বারা ভীতিপ্রাপ্ত হলে, নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে থানায় প্রাথমিক প্রতিকার হিসেবে জিডি করা যায়। কোনো ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা থাকলেও জিডি করা যায়।কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সনদ, দলিল, মোবাইল ফোন প্রভৃতি হারিয়ে গেলেও জিডি করতে হয়। কেউ নিখোঁজ হলে জিডি করতে হয়। অনেকের ধারণা, জিডি শুধু কেউ ভয়ভীতি বা হুমকি দিলেই করতে হয়। আসলে তা নয়। যেকোনো ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রেই প্রাপ্তবয়স্ক যেকোনো ব্যক্তি থানায় জিডি করতে পারেন।

এজাহার কখন করবেন?

কোনো অপরাধ সম্পর্কে থানায় যে অভিযোগ দেওয়া হয়, তাকে এজাহার বা এফআইআর বলে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে বা তাঁর পরিবারের কেউ কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি, যিনি ঘটনা ঘটতে দেখেছেন কিংবা ঘটনার কথা শুনেছেন বা অবগত আছেন, তিনি থানায় এজাহার করতে পারেন। এজাহার হচ্ছে মামলা রুজু করা। ঘটনাটি যে থানার এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে, সাধারণত ওই থানাতেই করা উচিত। এজাহারে ঘটনার পূর্ণ বিবরণ, ঘটনার স্থান, সময়, কীভাবে ঘটনা ঘটল, তার বিবরণ স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। এজাহারকারীর পূর্ণ ঠিকানা ও স্বাক্ষর থাকতে হবে। যদি মৌখিকভাবে থানায় এজাহার দেওয়া হয়, তাহলে থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তা লিখবেন এবং এজাহারকারীকে শোনাবেন। এজাহারকারীর স্বাক্ষর অবশ্যই দিতে হবে।

লক্ষণীয় বিষয়ঃ অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, জিডি আর এজাহার এক বিষয়। এ দুটি এক বিষয় নয়। জিডি হচ্ছে থানায় কোনো ঘটনা সম্পর্কে অবগত করা মাত্র, আর এজাহার হচ্ছে সরাসরি মামলা গ্রহণে পদক্ষেপ নেওয়া। জিডি কোনো অপরাধ সংঘটনের বিরুদ্ধে আইনি সহায়তাকারী সংস্থার সাহায্য পাওয়ার জন্য প্রথম পদক্ষেপ। ধরুন, একজন ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু এটি যদি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা হয়, তাহলে জিডি করতে হবে। আর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি যদি অপহরণের কারণে হয়, তাহলে এজাহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জিডি থেকেও মামলা হতে পারে। কোনো থানায় জিডি করার পর যদি পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে গুরুতর কোনো অপরাধের প্রমাণ মেলে, তাহলে পুলিশ বাদী হয়ে নন-এফআইআর মামলা করতে পারে। এ অনুযায়ী পুলিশ নন-প্রসিকিউশন প্রতিবেদন দাখিল করতে পারে এবং এর ভিত্তিতে বিচার শুরু হতে পারে। তাই থানায় গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে পুলিশকে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা করুন। কোনো ভুলের কারণে সঠিক আইনি আশ্রয় থেকে যেন বঞ্চিত না হোন, এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *